• ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গলাচিপায় গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর, হাসপাতালে ভর্তি 

পল্লী অঞ্চল ডেস্ক
প্রকাশিত মে ১২, ২০২৫, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
গলাচিপায় গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর, হাসপাতালে ভর্তি 

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা প্রতিবেদক 

পটুয়াখালীর গলাচিপায় ১ সন্তানের জননীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্বামী, ননদ, ননদের জামাই ও শ্বশুর-শাশুড়ীর বিরুদ্ধে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় কাতরাচ্ছে ওই গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গলাচিপা সদর ইউনিয়নের চরখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মজিবর সিকদার বাড়িতে। আহত গৃহবধূ মোসা. শাবনুর আক্তার (২০) কে তার স্বামী মো. হাসান সিকদারের প্ররোচনা ও নির্দেশনায় মারধর করে তার ননদ, ননদের জামাই ও শ্বশুর-শাশুড়ী। সোমবার (১২ মে) সকাল ৭ টায় শ্বশুর মজিবর সিকদারের ঘরে বসে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির সকলে মিলে একজোট হয়ে চড়াও হয় গৃহবধূ মোসা. শাবনুর আক্তারের উপর। এতে গৃহবধূ মোসা. শাবনুর আক্তার গুরুতর আহত হয়ে পড়ে বলে এলাকাবাসী জানান। এ বিষয়ে আহত গৃহবধূ মোসা. শাবনুর আক্তার হচ্ছেন গলাচিপা পৌরসভার সাগরদী রোডের মো. হারুন গাজীর বড় মেয়ে। আহত গৃহবধূ মোসা. শাবনুর আক্তার বলেন, আমার ননদ ফাতেমা বেগম এবং তার জামাই সহ আমার শ্বশুর-শাশুড়ী আমার স্বামী হাসান সিকদারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে সকলে মিলে আমার উপর চড়াও হয়ে আমার চুল ধরে এলোপাথারীভাবে আমাকে কিল, ঘুষি, থাপ্পর ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার ননদের স্বামী আমার তলপেটে স্বজোরে লাথি মারলে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং আমি ডাক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পড়ে এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তারা যৌতুকের জন্য আমার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে বলে। আমার বাবা একবার আমার স্বামীকে ব্যবসা করার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

 

এখন আরো ২ লক্ষ টাকা চায়। আমার বাবা গরিব মানুষ। ইলেকট্রিক মেকারের কাজ করে কোন রকম দিন আনে দিন খায়। আমার বাবা এত টাকা কীভাবে দিতে এই কথা আমার স্বামীকে বুঝিয়ে বললেও তিনি কোন কথা শুনে না। উল্টো তার পরিবারের লোকজনদেরকে আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে দেয়, যাতে তারা আমাকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

 

আমি এর বিচার চাই। যাতে আর কোন স্বামী স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবী না করে। আমার স্বামীর ঔরষে ৪ বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে। ছেলের নাম আব্দুল্লাহ। তিনি আরো জানান, আমার ননদের স্বামী মো. মহিউদ্দিন আমার স্বামী হাসান সিকদারের কাছে টাকা পাইবে। আর আমার স্বামী, শ্বশুর ও ননদ আমার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে ননদের স্বামীকে দিতে বলে।

 

আমি অস্বীকার করায় সকলে মিলে আমাকে মারধর করে-এই কথা বলে হাসপাতালের বেডেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাবনুর আক্তার। হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তুষার আহমেদ বলেন, শাবনুর আক্তার আমার চিকিৎসাধীনে ৩য় তলায় ৫নং বেডে ভর্তি আছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুলাজখম ও কালো কালো দাগ আছে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে।

 

তার তলপেটে আঘাত পাওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। শাবনুর আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ বিষয়ে শাবনুর আক্তারের বাবা হারুন গাজী জানান, আমি গরিব অসহায় মানুষ। আমার বেয়াই বাড়ির আশেপাশের লোকজন আমাকে ফোন করে আমার মেয়েকে মারধরের কথা জানায়। আমি যখন যেটা পারি আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে দেওয়ার চেষ্টা করি।

 

আমার কাছে প্রায়ই টাকা দাবী করে। আমি এর আগেও টাকা দিয়েছি। এখন আমি কীভাবে আবার টাকা দেব। এ বিষয়ে শাবনুর আক্তারের মা শাহিনুর বেগম জানান, মেয়েটা বিবাহ দেওয়ার পর থেকেই এই যন্ত্রনা পোহাতে হচ্ছে। প্রায় সময়ই আমার বেয়াই-বেয়াইন, ঝি এবং ঝিএর জামাই প্রায় সময়ই কারণে অকারণে আমার মেয়েকে মারধর করত। তাদেরকে টাকা দিলেই সব ঠিক হয়ে যায়। দিনদিন আমার স্বামী তাদেরকে কীভাবে টাকা দিবে।

 

তারা চায় না যে আমার মেয়ে তাদের সংসারে থাকুক। এ বিষয়ে শাবনুর আক্তারের ননদ ফাতেমা ও তার স্বামী মো. মহিউদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তারা বলেন, কথাকাটাকাটি হয়েছে কিন্তু মারধরের বিষয়টি তারা এড়িয়ে জান। এ বিষয়ে শ্বশুর মজিবর সিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পুত্রবধূকে কেউ মারধর করে নাই। তবে তাকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

 

গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন টুটু বলেন, আমি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। ইউনিয়ন পরিষদে বসে তাদেরকে মীমাংসার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে গলাচিপা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল বশার প্যাদা ও সুমন মিয়া বলেন, শাবনুর আক্তার খুব ভাল একটা মেয়ে। আমরা ছোটবেলা থেকেই তাকে দেখেছি।

 

বিবাহের পর থেকে ওর বাবা শ্বশুর বাড়ির লোকজনদেরকে টাকা দিতে দিতে পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন টাকার জন্য সবকিছুই করতে পারে এবং আজ সকালেও মেয়েটাকে টাকার জন্য মেরেছে বলে এলাকার লোকজন আমাদেরকে জানিয়েছে। গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন